অনেক দিন হলো কিছু লেখা হয় নি। আসলে লেখার মত কিছুই আসছিল না মনে। লেখাটা এমন এক বিষয় যা ব্যক্ত করার জন্য হাতে কিছু তথ্য, মাথায় কিছু চিন্তা আর মনে কিছু ভাবনার একান্ত প্রয়োজন যা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত গত কিছুদিন বা কিছু মাস ধরে। শেষ পর্যন্ত আজ ভগবান “রাম” দয়া করলেন এই অধমের ওপর যার ফলে রাত এগারোটা পয়তাল্লিশে কিছু হিজিবিজি লেখার এই আকর্ষণ টা এড়ানো বড়ই কঠিন হয়ে উঠলো।

যাই হোক, আসল কথায় আসি। আজকাল আবার আমি বুদ্ধদেব গুহর লেখা কোজাগর পড়ছি। সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম এবং সত্যি কথা বলতে অনেক কিছুই তখন ঠাহর করতে পারি নি বা পারার মত বুদ্ধিশুদ্ধি হয় নি। আমাদের ই এক দাদার ফেবু পোস্ট দেখে ভাবলাম আরো একবার পড়া যাক বুদ্ধ বাবুর সেই বই টা। এবং সত্যি কথা বলতে একেবারে চুম্বকের মত আটকে গেলাম বই টার সাথে। যারা কখনো storytell শোনার সাথে সাথে হাতে বই নিয়ে পড়েন নি বা শোনেন নি, তারা অবশ্যই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অনুভূতি টা সত্যিই দারুন। সাধারণত শুধু বই পড়ার সময় অনেক শব্দ বা বাক্য আমরা শুধু চোখ বুলিয়ে চালিয়ে দেই। কিন্তু যখন storytell এর সাথে হাতে বই নিয়ে ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড, sentence by sentence পড়বেন না শুনবেন, তখন মন চাইলেও যতক্ষণ না বাক্য পূর্ণ হচ্ছে ততক্ষণ আপনি পরের শব্দ বা বাক্যে পৌঁছতে পারবেন না এবং সেটাই এক বিশাল আকর্ষণ বা অনুভূতি।

কোজাগরের সাবলীল লেখনি, বিস্তৃত বর্ণনা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনা মনে এমন এক দাগ কাটে যা এড়ানো অসম্ভব। ছোটবেলা থেকেই জঙ্গলের পাশের শহরে বড়ো হয়েছি, জঙ্গল পাহাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, পাহাড়ি নদীর ধারে বনভোজন করেছি, হাতে বন্দুক নিয়ে বাবার সাথে শিকার করেছি, বড়ো হয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে ওখানে ছুটে গেছি, কিছু অজানা লোকের সাথে মনের মিল খুঁজে পেয়েছি, পাগলের মত দিকবিদিকশুণ্য হয়ে শুধু অজানাকে জানার জন্য, অচেনাকে চেনার জন্য ছুটে গেছি আর সবসময় এই পৃথিবীর এই প্রকৃতির এই অবারিত আকাশের এতটুকু ছোঁয়ার আশায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি বা এখনও বেড়াচ্ছি। কোজাগর যেনো আমার সেই আদিম অকৃত্তিম মনের জানালাটা আরো একটু খুলে দিলো। পালামৌর জঙ্গল, হালুক পাহাড়ের সৌন্দর্য, প্রকৃতি, সেখানের মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবন, তাদের মন, দুঃখ কষ্ট, তাদের শোষণের কথা, তাদের সুপ্ত বাসনা, তাদের ইচ্ছা, অতৃপ্ত আকাঙ্খার ও যে এক দৃষ্টিকোণ হতে পারে বা দৃষ্টিকোণটাকে বর্ণিত করার জন্য সাহিত্যের যে এক অভাবনীয় রূপ হতে পারে, তা কি অপূর্ব ভাষায় বর্ণিত করেছে এই কোজাগর তা ভাবতেই গায়ে শিহরণ জাগে । আমরা সবাই অজান্তেই কোনো না কোনো ভাবে কিছু অপূর্ব গল্প, কথা, অনুভূতির কর্ণধার কিন্তু নিজেরাই জানি না যে আমরা সেই নন্দনকাননের বাসিন্দা । কে জানে হয়তো “বগল মে ছোড়া শহর মে ধিন্ডরা” কথাটার উৎপত্তি তার থেকেই। কোজাগর পড়তে পড়তে বুদ্ধ বাবুর কোয়েলের কাছে বইটা খুব মনে পড়ছে, আর মনে পড়ছে যশবন্ত এর কথা। আমার মনে পড়ছে সেই শেষ পৃষ্ঠার কথা যা পড়তে পড়তে ক্লাস নাইনে ও আমার চোখে জল এসে পড়েছিল । শেষ হয়ে গেলো বইটা? এত তাড়াতাড়ি? আরো কিছু তো লিখতে পারতেন বুদ্ধ বাবু, একটা happy ending তো দিতে পারতেন? কেনো এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো বইটা? কেনো বিদায়ের বেদনায় বইটা শেষ হলো? বাস্তব সত্যিই ক্ষনস্থায়ী, বড়ই বেরসিক…..

Hope You Liked The Post ?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 22

No votes so far! Be the first to rate this post.

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

By tripotomaniac

Born at Lumding, a town in Assam, Anirban spent his childhood enjoying the whispering sounds of the woods and trees, cherishing the flora and fauna in places like Dwarband, Masimpur, Burlongfur, Mandardisa. Anirban’s writings reflect his deep love towards nature, people and a culture that we can follow to live by. In Anirban’s words, the golden sunrise, the meadows, the snow-clad tall mountains, the never ending seas, the horizon, the smell of sand and soil, large monuments, the history, the people fascinate him and take him to a different world. And he gives his father all the credit who made him feel, cherish and experience these wonders of Mother Earth. His contributions to travel sites like Tripadvisor has a reader base of over forty thousand as well as in websites like Tripoto, He is an author for Happytrips.com, a Times Travel Magazine. His first poetry collection “Osheemer Daak” – Call of the endless is recently published and available in Amazon, Flipkart. One can follow him at www.facebook.com/anirbandeb or his website https://www.endlessvista.com. His email id is tripotomaniac@gmail.com